বাংলাদেশ একাত্তর অনলাইন:
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) মধ্যে অফিস দখলসহ দ্বন্দ্বের কারণে এয়ারপোর্টে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিছে।
অভিযোগ উঠেছে, এভসেকর বাঁধায় ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এরই মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোন এরিয়ায় অবস্থিত এপিবিএনের অফিসটি দখল করে এভসেক। এমন ঘটনায় পরদিন ২৯ অক্টোবর এপিবিএনের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।,
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো একে অপরের সঙ্গে সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করবে, এটাই কাম্য। তবে এভসেক ও এপিবিএনের এ ধরনের মুখোমুখি অবস্থান আমাদের কাছে মোটেও কাম্য নয়। তা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেনা।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এভসেক সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব সিকিউরিটি। বিমান বাহিনী, এপিবিএনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এভসেকের অধীনের নিরাপত্তার কাজটি করে থাকেন। এখানে কারো সঙ্গে কারো বিরোধ নেই। সবাই সরকারি সংস্থার লোক। আর ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের অধীনে বিমান বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য কাজ করছে। যতদিন নিরাপত্তাব্যবস্থা সুষ্ঠু হবে না, সেই সময় পর্যন্ত তারা কাজ করবে।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সরকারি দুই সংস্থার এমন মুখোমুখি অবস্থান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কা হয়ে দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিকভাবেও শাহজালাল বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের অ্যাপ্রন এলাকায় (যেখানে বিমান পার্ক করা, লোড-আনলোড করা, রিফুয়েল করা বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়) এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের কমান্ড সেন্টার অবস্থিত। গত ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে এপিবিএনের অফিসটি দখল করে এভসেক।
এ ঘটনায় এপিবিএনের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা জিডির বিষয়ে গতকাল বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। তাই আমরা জিডির বিষয়টি লিখিত ভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত জিডির কোনো তদন্তকাজ শুরু হয়নি।
এপিবিএনের অধিনায়ক সিহাব কায়সার খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সক্ষমতা আগে যেমন ছিল এখনো রয়েছে। আমরা দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আমাদের সেটি করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি পরিপত্র, আইকাও (আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা)-এর নিয়মাবলী যেভাবে রয়েছে, আমরা সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখন কী কারণে এপিবিএনকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে সেটি বোধগম্য নয়। অ্যাপ্রন এরিয়ায় আমাদের অফিসটি না জানিয়ে তারা নিয়ে গেছে। আমাদেরকে এয়ারসাইড ও টার্মিনাল সাইডে ডিউটি করতে দেওয়া হচ্ছে না। আগে ১ হাজার ২০০ পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। এখন ৬০০ পুলিশ ডিউটি করছে।
সুত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর বিমানবন্দরে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে বিমান বাহিনী থেকে ফোর্সের ৬০০ সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে। ফলে বিমানবন্দরের ভেতরে এপিবিএনের সদস্যদের ডিউটি করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক আবেদনের পর মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি চাকরিরত কোনো ডিসিপ্লিনড ফোর্সের সদস্যদের আইনসম্মতভাবে বছরের পর বছর অন্য কোথাও সংযুক্ত রাখা সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রেটিং ছিল থার্ড ক্যাটাগরিতে, অর্থাৎ নিরাপত্তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। নিরাপদে অবতরণ ও উড্ডয়ন ছিল হুমকির মুখে। অবাধ চোরাকারবারীর অভিযোগ ছিল। যাত্রী হয়রানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পার্কিংয়ে ছিল না কোনো শৃঙ্খলা। পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য ছিল চরমে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ সালের ১ জুন বিমানবন্দরে নিরাপত্তার কাজ শুরু করে আর্মড পুলিশ। নিরাপত্তার পাশাপাশি চোরাচালান রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এপিবিএন। এপিবিএন সরকারি নীতি নৈতিকতা মেনেই কাজ করছে এবং করবে।
প্রবাসী হয়দার মোল্লা, সাগর, ইনহাম বলেন, দুই বাহিনী এপিবিএন ও এভসেক বিমানবন্দর নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ও কাজ করে। তাদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব হলে আমরা অনিরাপদ বিমানবন্দরে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে উর্ধতন কর্মকর্তাগন বিষয়টি সমাধান করলে নিরাপত্তার নিশ্চিত হবে এয়ারপোর্ট এবং প্রবাসীদের কোনো প্রকার হেলায় পড়তে হবেনা।