নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পল্লবী এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জমিদখলের মাধ্যমে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করা এই অপরাধীরা নিজেদের নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
অস্ত্রসহ গ্রেফতারকৃত দুই সন্ত্রাসী
গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. হাসান মাহমুদ (৩১) ও সবুজ হাওলাদার (২৮)। অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি খালি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, একটি রামদা ও তিনটি বাঁশের হাতলযুক্ত লোহার হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানের বিস্তারিত
গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাত ১১:৩০ মিনিটে যৌথ বাহিনীর একটি দল পল্লবীর বেগুনটিলা কামাল মজুমদার ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড নামক স্থানের সামনে একদল দুষ্কৃতকারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সমবেত হয়েছে এবং বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্রুত অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অপরাধীরা পালানোর চেষ্টা করে। তবে হাসান ও সবুজকে অস্ত্রসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়, অন্যরা কৌশলে পালিয়ে যায়।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব অস্ত্র নিজেদের হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করেছে।
অস্ত্রধারী কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসের ঘাঁটি পল্লবী
পল্লবীর মিরপুর ৬ ও ৭ নাম্বার, মিরপুর ১২ সাত্তার মোল্লার বস্তি, আলব্দীগ্রাম, বাইগেরটেক, বারনটেক, টেকেরবাড়ী, উত্তর কালসী, মিরপুর ১২ ধ-ব্লক, ই-ব্লক, সি-ব্লক, ডি-ব্লক, কুর্মিটোলা বস্তি, কালাপানি বস্তি, বাউনিয়াবাদ, বিহারি ক্যাম্প, আদর্শ নগর, কলাবাগান বস্তি, এভিনিউ-৫ ও পলাশ নগর এলাকায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। ওরা মুলত, অন্যের হয়ে ভাড়ায় খেটে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটায়। চাঁদাবাজি, জমি দখল, বাড়ী দখল, মারামারি কাটাকাটি হত্যাও ঘটায়।
রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে গ্যাং কালচার
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় বড় ভাইদের আশির্বাদে থাকা এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সন্ধ্যা নামলেই অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়। তারা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বাড়ি-জমি দখল, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে আসছে, যেকারণে ৫ই আগস্টের পর একাধিক হত্যা কান্ড শুধু মাত্র পল্লবীতে ঘটেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এলাকায় চরম অপরাধের বিস্তার ঠেকাতে শুধু পুলিশের নিয়মিত অভিযান যথেষ্ট নয়, বরং সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।
আইনানুগ ব্যবস্থা ও চলমান অভিযান
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্লবী থানায় অস্ত্র আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সন্ত্রাসী চক্রের পলাতক সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পল্লবীর সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের মদদদাতাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। অন্যথায়, পুরো এলাকা আরও ভয়াবহ সন্ত্রাসের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।