মিরপুর প্রতিনিধি: রাজধানীর মিরপুর রূপনগরে তানযীমুল উম্মাহ মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জামজাম ইসলাম রিতুল (৯)-এর ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অষ্টম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক তাকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্টিলের স্কেল ও প্লাস্টিকের ঝাড়ু দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
পরিবারের অভিযোগ, হামলাকারীরা রিতুলের কাছে ২০০০ টাকা দাবি করে। সে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। চিৎকার করে সাহায্য চাইলেও মাদরাসার শিক্ষকেরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
ঘটনার বিস্তারিত
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৮:০০:
রিতুলকে মাদরাসার ৭ম তলা থেকে টেনে-হিঁচড়ে ৫ম তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দরজা বন্ধ করে স্টিলের স্কেল ও প্লাস্টিকের ঝাড়ু দিয়ে পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়।
নির্যাতনের কারণে তার শরীর ফুলে যায় ও রক্তাক্ত হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কক্ষে আটকে রাখা হয়।
পরদিন ভাইস-প্রিন্সিপাল ও পরিচালক ঘটনাটি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি, বরং তাকে ব্যথানাশক ওষুধ খাইয়ে ক্লাসে পাঠানো হয়।
ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পরিবারের কাছে ঘটনা গোপন রাখতে রিতুলকে ফোন করিয়ে ভুল তথ্য দিতে বাধ্য করে। তাকে বলা হয়, “মাদরাসায় একটি প্রতিযোগিতা থাকায় বৃহস্পতিবার বাসায় ফিরতে পারবে না।”
তবে রিতুল গোপনে তার ভাইয়ের নম্বর এক সহপাঠীকে দেয়, যে পরে এক শিক্ষকের ফোন ব্যবহার করে তার ভাইকে জানায় যে সে গুরুতর অসুস্থ।
পরিবার দ্রুত মাদরাসায় গিয়ে রিতুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশি তদন্ত ও মামলা
রিতুলের পরিবার রূপনগর থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং: ১৫, তারিখ: ০৭/০৩/২০২৫।
অভিযুক্তরা:
১। ইয়ামিন খান শাহি (১৫)
২। আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫)
৩। আহমদ সিয়াম (১৫)
৪। অজ্ঞাতনামা শিক্ষক ও মাদরাসার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
রূপনগর থানা পুলিশ
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, “আমরা গতকাল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পলাতক রয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তারে আবার অভিযান চালানো হবে।”
মাদরাসা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা
পরিবারের পক্ষ থেকে মাদরাসার সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ তা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
মাদরাসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, তিনি তার সন্তানকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
অন্যদিকে, মাদরাসার চেয়ারম্যান বলেন, তিনি হজে যাচ্ছেন, তাই এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের বক্তব্য ছিল, “আমাদের দেশজুড়ে ১০৫টি শাখা রয়েছে—একটি বন্ধ হলে কোনো সমস্যা নেই।”
পরিবারের দাবি ও প্রশাসনের করণীয়
রিতুলের পরিবারের দাবি, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।