রাজু আহমেদ: প্রকাশিত, ৯ মার্চ ২০২৫
এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের হতে পারে? যখন ৯ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী তারই প্রতিষ্ঠানে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়, তখন কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা কি বরদাশতযোগ্য? দেশে কি এতটাই নৈরাজ্য চলছে যে, শিশুদের নিরাপত্তার প্রশ্নে এভাবে উদাসীন থাকা যায়?
ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর রুপনগর থানা এলাকা শিয়ালবাড়ী (বিইউবিটি সংলগ্ন) তানযীমুল উম্মাহ মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জামজাম ইসলাম রিতুল (৯) নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির চার শিক্ষার্থী তাকে দুই ঘণ্টা ধরে স্টিলের স্কেল ও প্লাস্টিকের ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে কোনো চিকিৎসা দেয়নি।
পরিবারের ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা রিতুলের কাছে ২০০০ টাকা দাবি করেছিল। সে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে একটি কক্ষে আটকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। রিতুল চিৎকার করে সাহায্য চাইলে এবং পাশের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিক্ষককে ডাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা
নির্যাতনের পর হামলাকারীরা রিতুলকে জোরপূর্বক গোসল করিয়ে আঘাতের চিহ্ন লুকানোর চেষ্টা করে এবং তাকে হুমকি দিয়ে তার রুমে পাঠিয়ে দেয়। পরদিনও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বরং রিতুলকে খালি পেটে ব্যথানাশক ওষুধ খেতে বাধ্য করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। বরং রিতুলকে এক শিক্ষকের ফোন থেকে পরিবারের কাছে কল করতে বাধ্য করা হয়, যাতে সে বলে যে আসন্ন প্রতিযোগিতার কারণে শুক্রবার বাসায় যেতে পারবে না।
সহপাঠীর সহায়তায় পরিবারের কাছে তথ্য পৌঁছে
রিতুল গোপনে তার ভাইয়ের নম্বর এক সহপাঠীকে দেয়, যে পরে এক শিক্ষকের ফোন থেকে তার ভাইকে কল করে মাদ্রাসায় আসতে বলে। সন্দেহ হওয়ায় তার ভাই দ্রুত মাদ্রাসায় গিয়ে দেখে, রিতুল মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে এবং নড়াচড়া করতে পারছে না। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা
পরিবারের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মাদ্রাসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, তিনি তার সন্তানকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই আসতে পারেননি। অন্যদিকে, চেয়ারম্যান জানান, তিনি হজে যাচ্ছেন, তাই এ বিষয়ে জড়িত হবেন না। তাদের বক্তব্য ছিল, “আমাদের দেশজুড়ে ১০৫টি শাখা রয়েছে—একটি বন্ধ হলে কোনো সমস্যা নেই।”
রিতুলের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় শুধু ভুক্তভোগী পরিবার নয়, সচেতন নাগরিকরাও ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির দাবিতে সবার সোচ্চার হওয়া জরুরি, যাতে আর কোনো শিক্ষার্থী এভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়।