শুক্রবার , ৪ নভেম্বর ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আওয়ামীলীগ
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বি এন পি
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজধানী
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে শক্তিশালী সিন্ডিকেটঃ দুদদকের নোটিশ

প্রতিবেদক
বাংলাদেশ একাত্তর
নভেম্বর ৪, ২০২২ ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ একাত্তর; ইউসুফ/ শুক্রবার; ১১ঃ৫৫

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা হওয়ার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বক্তব্য গ্রহনের জন্য দুদক তলব করেছে।

অভিযুক্তরা হলো আবুল হাসেম সরদার, নির্বাহী প্রকৌশলী। মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী। মোঃ জাফর আলী শিকদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী। মোঃ শাজাহান আলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী।

সরকারি চাকরি অথবা যেকোন চাকরিতেই কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্যদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চাকরি বিধিমালা পরিপন্থী হলেও স্বাভাবিক ঘটনার মত যুগযুগ ধরে এসব দ্বন্দ্ব চলেই আসছে। কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে এই দ্বন্দ্ব বর্তমানে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করেছে। কিছু নির্দিষ্ট প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও সাবেক কিছু প্রভাবশালী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আস্থাভাজন ও আজ্ঞাবহ না হতে পারলেই বিভিন্ন খড়গ নেমে আসতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়না। এমনকি কথায় কথায় বরখাস্ত, কল্পনাপ্রসূত বিষয়ে বিভাগীয় মামলা, চাকরি খেয়ে ফেলা ইত্যাদি ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি দিয়ে নিজেদের আজ্ঞাবহ করে রাখতে সচেষ্ঠ এই গুটিকয়েক প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং কিছু সাবেক কর্মকর্তার অনৈতিক শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় গত ১৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী নইমুল কাদেরের স্বাক্ষরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোর অর্থব্যয়, বরাদ্দবিহীন বিল প্রদানের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জনশ্রুতি ছিলো যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মোটামুটি সকল জেলাতেই অর্থব্যয় হয়ে থাকলেও শুধু ঢাকা মেট্রোর একটা নির্দিষ্ট সময়কে তদন্ত করার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এবং তদন্তের ভয়ভীতি দেখিয়ে তৎকালীন কিছু কর্মকর্তাকে আজ্ঞাবহ করার মাধ্যমে যারা বর্তমানে অন্যান্য বিভিন্ন জেলায় অথবা ঢাকা মেট্রোতেই কর্মরত আছে তাদের দ্বারা অনৈতিক কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা।

এছাড়াও নইমুল কাদেরের সময়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিভিন্ন নাম মাত্র তদন্ত কমিটি করে অনেককেই হয়রানি করার চেষ্ঠা করা হয়েছে বলে অনেক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই জানান।

ঢাকা মেট্রোর ১৩ টি প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বরাদ্দ ও বিল প্রদানের তদন্তের বিষয়ে গোপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেখা যায় যে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই নাম মাত্র উপস্থিত হয়ে সঠিক যাচাই বাছাই না করেই শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু কর্মকর্তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে। জুন মাসে দেয়া বিল ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই এবং কিসের ভিত্তিতে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে তার সুষ্ঠু উল্লেখ না করেই কয়েকজন কর্মকর্তাকে জড়িত মর্মে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি যাদেরকে জড়িত মর্মে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে কোন ধরণের বক্তব্য, স্বাক্ষ্যগ্রহণ কিছুই করা হয়নি যা সরাসরি সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে খোদ তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বাধ সাধলে তাকে নইমুল কাদের যাচ্ছেতাই দুর্ব্যবহার এবং ভয়ভীতি দেখান বলে জানা গেছে। কোন তদন্ত কমিটিকে এইভাবে প্রভাবিত করাও অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলে অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোতে বরাদ্দবিহীন বিল প্রদানের বিষয়ে একই তদন্ত কমিটিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে কোন ধরণের যুক্তিসংগত বিষয় না সামনে এনে তাড়াহুড়া করে রিপোর্ট দিতে বাধ্য করা হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন। তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য, প্রধান কার্যালয়ের প্রভাবশালী দুইজন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বাইরের কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে জড়িত বলেও জানা যায়। এর মধ্যে একজন প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে ২০০ কোটি টাকা বিদেশে কানাডা, লন্ডন, দুবাই সহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন এই মর্মে দুদকে তদন্তাধীন আছেন। যেকোন ধরণের বরাদ্দ প্রধান কার্যালয় অথবা প্রকল্প অফিস থেকে “আইবিএএস (ibas) পোস্টিং দেয়া হয় এবং এটা ঠিকাদারের একাউন্টে পেমেন্ট হয়। আইবিএএস (ibas) অথবা কোনো ঠিকাদারের সাক্ষাৎকার না নিয়েই কোন রিপোর্ট যে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে করা হচ্ছে এই বিষয় নিয়ে খোদ তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যেই বাগবিতণ্ডা হয়েছে বলে প্রধান কার্যালয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোর তৎকালীন আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আখতারুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশ। আমিসহ আমার কিছু সহকারী, উপ সহকারি প্রকৌশলীদেরকে “উনাদের” নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে না পেরেই উনারা এসব তদন্ত কমিটি করেছেন। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকটি কাজ চলমান রয়েছে, কোনো দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। আমি জানিনা তদন্ত কমিটি কি রিপোর্ট দিয়েছে কি দেয়নি তবে উনি যাওয়ার আগের তারিখে ব্যাকডেটে দিলেও দিয়ে থাকতে পারে। আমার জানা নেই। আমাদের কোন বক্তব্যও নেয়নি। বরাদ্দবিহীন বিল প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ibas টাকা বরাদ্দ পোস্টিং কখনও নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে দিতে পারেনা, বরাদ্দ হেড অফিস থেকেই দেয়, ibas পোস্টিং হেড অফিস থেকেই কেউ না কেউ দেয় অথবা পিডি অফিস থেকে দেয়। হেড অফিস থেকে যে টাকা ibas পোস্টিং দেয় তার বেশি টাকা সফটওয়্যার থেকে কখনোই পেমেন্ট হয়না, ডিক্লাইন করে, এখন ভাই কি বলবো উনারাই সব, উনারাই পিডি, উনারাই পোস্টিং দেয়, আবার উনারাই তদন্ত করে, কারও বক্তব্যও নেয়না, আসলে যখন উনারা আমাদেরকে ব্যবহার করতে পারেনা তখন এসব হয়রানি করার পাঁয়তারা করে। দেশে আইন আছে, আমাদের আইনের উপর আস্থা আছে। হয়রানি করলে আইনের দ্বারস্থ হবো।

সুত্র বলছে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নইমুল কাদের তদন্ত করার নামে (আবুল কালাম আখতারুজ্জামান) আপনাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে এই মর্মে জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে বিব্রত বোধ করছি।

এই ব্যাপারে ওই তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব রতীশ চন্দ্র সেনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে হেড অফিসে গুঞ্জন আছে এই রিপোর্টে ১২-১৩ জনকে হেনস্থা করার সহযোগিতা করায় কমিটির সদস্য হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ইউনুস আলীকে উপ পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নইমুল কাদের নিজে স্বাক্ষর করে। এছাড়াও ইউনুস আলী তদন্ত রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন ১০ অক্টোবর পাশাপাশি নইমুল কাদের তাকে উপ পরিচালকের দায়িত্বও দেন ওই ১০ অক্টোবরেই। প্রধান কার্যালয়ের অনেকেই বলাবলি করেন যে এইসব অনিয়মে সহায়তা করায় আর প্রভাবশালীদের চাটুকারিতা করেই উনি গিফট হিসেবে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিজের করে নিয়েছেন। প্রধান কার্যালয় সহ অন্যান্য বেশিরভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তারাই এইসকল হয়রানির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বিভিন্ন সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা এসব কাজ ভালো ফলাফল বয়ে আনেনা বিধায় এসব বিষয়ে জড়িতদের নিবৃত্ত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায় বিভিন্ন সময়েই বিভিন্ন প্রধান প্রকৌশলীর এবং দীর্ঘদিন একই জায়গায় পদ নিয়ে থাকা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ওই দুই প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সামান্য মতপার্থক্য ঘটা সকলকেই এরকম বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে এবং অনেকে চাকরিও হারিয়েছেন। এইসবের বিহিত চেয়েছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আসলে দীর্ঘসময় প্রায় ৮-৯ বছর একই জায়গায় কর্মস্থানের ফলে কয়েকজন মিলে একটি অনৈতিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাতে সাবেক কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। ইনারা কেউ কেউ নিজেকে প্রভাবশালী মন্ত্রীর বাল্যবন্ধু, কেউ নিজেকে কোন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাগ্নে, আবার কেউ কেউ সরকারি দলের প্রভাবশালী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কাছের লোক বলে নিজেদের পরিচয় দেন। অথচ আদৌ তাদের সেই সম্পর্ক আছে কিনা তার ভিত্তি নাই। আমরা চাকরির ভয়ে সরাসরি কিছু বলতে পারিনা কারণ তাদের অনেক ক্ষমতা এবং প্রভাব। তবে এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন। নির্দোষ অনেককেই অনেক সময় এইসব কারণে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে যাতে তাদের পরিবার পরিজন সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আশা করি কর্তৃপক্ষের সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এসবের সমাধান হবে।

সর্বশেষ - সর্বশেষ সংবাদ