বাংলাদেশ একাত্তর.কম: আব্দুল্লাহ আল মাসুম
অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করণ, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বিক্রয়/বাজারজাতকরণের অভিযোগে রাজধানীর ০৩টি প্রতিষ্ঠানে র্যাবের অভিযানে মূলহোতাসহ ০৯ জন গ্রেফতার। বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং জাল মেয়াদ উৎকীর্ণ ভেজাল মেডিকেল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ।
র্যাব-২ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করণ, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসমূহ মজুদ এবং বাজারজাত করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার গোয়েন্দা নজরদারীর ভিত্তিতে গত ১৫/০৪/২০২১খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ১৫.৩০ ঘটিকা হতে অদ্য সকাল পর্যন্ত র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী থানা এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি এন্ড সার্ভিস লিঃ এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লিঃ নামে ০৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এর প্রতিনিধির সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
উক্ত অভিযান পরিচালনার জন্য ঘটনাস্থলে আভিযানিক দল উপস্থিত হয়ে দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরণের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এইরূপ বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টসমূহের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে তাদের ওয়্যারহাউজসমূহ তল্লাশীকালে আভিযানকারী দলের সামনে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেখানে মজুদকৃত বেশির ভাগ মেডিকেল ডিভাইস অননুমোদিত, প্রায় সকল প্রকার টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টসমূহের ব্যবহারের মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা সহসা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
র্যাবের আভিযানিক দল ঘটনাস্থলসমূহ হতে বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্ত্বাধিকারী ১। মোঃ শামীম মোল্লা(৪০), ২। ম্যানেজার মোঃ শহীদুল আলম(৪২), ৩। মোঃ মাহমুদুল হাসান(৪০), এমডি, এক্সন টেকনলজিস এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, ৪। এস এম মোস্তফা কামাল(৪৮), এমডি, হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, ৫। আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির(২৪), ইঞ্জিনিয়ার, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, ৬। মোঃ জিয়াউর রহমান(৩৫), অফিস সহকারী, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, ৭। মোঃ সুমন(৩৫) পিতা- মৃত হাবিবুর রহমান, হিসাব রক্ষক, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, ৮। জাহিদুল আমিন পুলক(২৭), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল এবং ৯। মোঃ সোহেল রানা(২৮), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল’কে আটকসহ বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং জাল মেয়াদ উৎকীর্ণ ভেজাল মেডিকেল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ করে।
র্যাব ২ এর প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামীরা পারস্পরিক যোগসাজশে ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সহসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এরূপ টেস্ট কিট ও রি-এজন্টেসমূহ দেশী বিদেশী আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের নিকট হতে অতি স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করে পুনরায় তাতে বর্ধিত মেয়াদো তারিখ বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ বা টেম্পারিং করে এই সকল টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসমূহ বাজারজাত করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টও তারা নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে আসছিল, যেমন- জন্ডিস, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, করোনা, ক্যানসার প্রভৃতি রোগসহ অন্যান্য প্যাথলোজিক্যাল টেস্টের জন্য যেসকল কিট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এমন কি ‘এইডস’ রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে এই তালিকায়, যা তাদের সংরক্ষণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে এই ০৩টি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা জানান, বিগত ২০১০ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামে সংগঠিত হয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে, অবৈধভাবে ও অসৎ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে মানহীন ও স্বল্প মেয়াদস্থিত টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টসমূহ বিদেশ থেকে আমদানি, সংরক্ষণ ও দেশব্যাপী বাজারজাতকরণ করতেন, যা সরবরাহ করার পর্যায়েই বস্তুতঃ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেত। এই দুষ্ট চক্রের প্রতারণার জাল এবং দুরভিসন্ধিমূলক ব্যবসাবুদ্ধি বহুদূর পর্যন্ত প্রোথিত, যার মূলোৎপাটনের জন্য র্যাব ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে। জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করার দায়ে এই সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের হোতাদেরকে যথাযথ আইনী ধারা বলে এজাহার দায়ের করতঃ থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।