বাংলাদেশ একাত্তর.কম/ মাহবুব হোসেন:
একজন চালক, হেলপার, কন্ডাক্টারসহ ২০ থেকে ২২ যাত্রী আছে। কিন্তু তারা সবাই যাত্রী নয়, ডাকাত দলের সদস্যও রয়েছে এ বাসে। ৪ অক্টোবর এমন একটি বাসে খুন হন সাভারের লস্কর রবিউল ইসলাম (৪১)। এ হত্যাকাণ্ডে পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ডাকাতির অভিনব ও ভয়ংকর তথ্য। এই ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লা। তাকেসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
আটকরা হলো- মো.বসির মোল্লা (৪২), শেখ হাফিজ (৩৫), মো.আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো.আমির হোসেন (২৮), মো.আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো.নঈম (২২), তপন (২৮), নাজমুল (৩০)। এরইমধ্যে বসির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকিদের আজ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে বসির ডাকাতি করে আসছে। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু করে। পুরো বাস কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নেয় বসির। এরপর তার দলের চারজন সদস্যকে ডেকে পাঠায়। তারা প্রত্যকে আরো তিন চারজন করে নিয়ে সদস্য নিয়ে আসে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অনেক যাত্রী দেখে সাধারণ যাত্রীরা বাসে উঠে। উঠার পর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সুবিধামতো স্থানে যাত্রীকে নামিয়ে দেয় এই ডাকাতের সদস্যরা।
গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া করেন ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেয়ার পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের সদস্যরা ও অন্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয় বসির। নিজেরাই সব কেউ চালক, কেউ হেল্পার, কেউ কন্ডাক্টার সেজে একজন দুজন করে যাত্রী নিত। পরে সুবিধা মত স্থানে তাদের সব কেড়ে নিয়ে নামিয়ে দিতো। বাসটি ভাড়া নেয়ার পর বসির ও তার দলের সদস্যরা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি এলাকায় গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে ডাকাতি করে দৌলদিয়ায় সারা রাত অবস্থান করে। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলদিয়া থেকে ফেরার পথে লস্কর রবিউল ইসলামকে বাসে তুলে তারা।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, রাত ১০ টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে উঠার পর তার সব কিছু কেড়ে নিতে চাইলে তিনি বাধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরে, কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধে। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তার হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করে। এতে বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যায় ডাকাত বসির ও তার সদস্যরা।
বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছিল দেখে রাত ১২ টার দিকে রবিউলের নাম্বারে তা মা কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানায়, এই নাম্বারের মালিক খুন হয়েছে। তার লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙ্গে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।
৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে রবিউলের পরিবার মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করে।
এ হত্যায় ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করেন উপপরিদর্শক মো. সালে ইমরান ও তার দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসআই সালে ইমরান জানান, ১৪ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বসির। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়িত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত আরো বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থি ছিলো নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্যরা। তারা জানায়, হত্যকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন মৃত্যুদণ্ড হয়।