উসামাবীন: প্রকাশিত, রবিবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ক্লাস না নেওয়া ও প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গার্ডিয়ান নার্সিং ভর্তি কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ভর্তির পর শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো ক্লাস করানো হয়নি, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বই সরবরাহ করা হয়নি, এমনকি পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
ভর্তি বাবদ কোটি টাকার প্রতারণা:
ফার্মগেট, নবীনগর, সাভার ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করা এই কোচিং সেন্টার থেকে ভর্তির নামে প্রতিজনের কাছ থেকে ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি নেওয়ার পর থেকে ক্লাস না করিয়ে নানান অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয় এবং পরীক্ষার নামে আরও টাকা নেওয়া হয়।
শিক্ষকের আত্মগোপন ও হুমকি;
প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক মো. নিরব-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দিতেন এবং ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান। শিক্ষার্থীরা মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে তাদের হুমকি দেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিরপুর মডেল থানায় গত ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ইং তারিখে লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা গার্ডিয়ান নার্সিং কোচিং সেন্টার, মিরপুর ১০-এর শিক্ষার্থীরা। মো. নিরবের কাছে আমরা কোচিং ফি ও অন্যান্য খরচ দিয়েছি, কিন্তু তিনি আমাদের পাঠদান করেননি। হেড অফিস থেকে বই দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা কোনো বই পাইনি। বর্তমানে নিরব উধাও এবং হেড অফিস তার কোনো দায়ভার নিতে রাজি নয়।”
অভিভাবকদের আর্থিক সংকট ও ক্ষোভ:
অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করেছেন। কেউ কেউ নিজেদের চিকিৎসার টাকা বাঁচিয়ে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন। এখন তারা প্রতারণার শিকার হয়ে দিশেহারা।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের নীরবতা:
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, গার্ডিয়ান নার্সিং কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নতুন নয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বারবার প্রতারণা করে আসছে। বিপদে পড়লে তারা কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না এবং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এরা আগে থেকেই প্রতারণা করে আসছে। টাকা নিয়ে উধাও হওয়া তাদের নিয়মিত কাজ। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এরা শিক্ষাদান করতে নয় এরা প্রতারণা মুলক বানিজ্য করতে আসছে।”
কোচিং সেন্টারের প্রতিক্রিয়া;
এ বিষয়ে গার্ডিয়ান নার্সিং কোচিং সেন্টারের হেড অফিসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়, “আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করছি এবং বইও প্রদান করবো।” তবে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসযোগ্য মনে করছেন না, কারণ অতীতেও তারা একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেনি।
আইনি ব্যবস্থা দাবি;
শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চান, কোচিং সেন্টারের মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এভাবে প্রতারিত না হন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে গার্ডিয়ান নার্সিং কোচিং সেন্টারের পরিচালক সাব্বির বলেন, আমরা স্টুডেন্টদের সব রকম সুযোগ সুবিধা দিবো, নিরব প্রতারণা করেছে শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা তাকেও খুজছি।
অন্যদিকে শিক্ষার্থী ও গার্জিয়ানটা বলছেন, এই পরিচালক সাব্বির সব সময় মিষ্টি কথা বলে পরে আর কাজ করেনা, আমাদের প্রায়ই ২শ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে এখন বই দেয়না ক্লাস করায়না ওরা একটা প্রতারক চক্র।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযোগ পেয়েছি আমি এখনো তদন্তে যায়নি।
সচেতন মহল মনে করছে, শিক্ষা খাতে এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ করতে প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হবে।