বাংলাদেশ একাত্তর.কম/নিজেস্ব প্রতিবেদক:
বাংলার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কারিগরি সমস্যা দেখা না দিলে আজ শনিবার ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান–১-এ) বসানো হতে পারে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যানটি বসানো হবে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, আজ সকাল সোয়া নয়টায় কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়াইন-ই ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩৮তম স্প্যানটি নিয়ে নির্ধারিত পিয়ারে উদ্দেশে রওনা হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়ায় কারিগরি সমস্যা না দেখা দিলে আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এদিনই স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে কাল স্প্যানটি বসানো হবে।
সেতুসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, নির্দিষ্ট খুঁটির কাছে স্প্যান পৌঁছানোর পর সময় থাকলে আজই বসানো হতে পারে, নয়তো কাল রোববার সকালে স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। ৩৮তম স্প্যানটি বসানো হলে সেতুর ৫ হাজার ৭০০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হবে। স্প্যানটি ১৬ নভেম্বর বসানোর পূর্বশিডিউল ছিল। তবে নির্ধারিত পিয়ার দুটির একটি ডাঙায়, অপরটি নদীতে থাকায় ড্রেজিং করে খুঁটি দুটির মাঝের স্থানটি স্প্যানবাহী ভাসমান ক্রেনের চলাচলের উপযোগী করতে হয়। এরপর কারিগরি অন্যান্য বিষয় প্রস্তুত করতে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যায়। এখন স্প্যানটি বসানোর জন্য প্রস্তুত।
৩৭তম স্প্যান বসানোর ১০ দিনের মধ্যে এই স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হলো। গত ১২ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তের ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৩৭তম স্প্যান। সম্পূর্ণ সেতু দৃশ্যমান হতে এখনো বাকি আছে আরও ৪টি স্প্যান।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩৮তম স্প্যানটি বসানোর পর এ মাসে আরও একটি স্প্যান বসানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কটি স্প্যান বসানো শেষ হবে। ইতি মধ্যে সব কটি স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ১৬৫টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬টির বেশি।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।
এরপর একে একে বসানো হয়েছে ৩৭টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক শূন্য ৩ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত তারিখ অনুসারে ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
পদ্মাসেতু উপর দিয়ে গাড়ী চলাচল হলে শুধু দক্ষিণা অঞ্চলের মানুষ নয় সারা বাংলাদেশের মানুষ খুব সহজেই এপ্রান্তে থেকে ওপ্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।