নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশ, ২৮ মার্চ ২০২৫
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের রাজনীতিতে মো. নুর হাকিম একসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শেখ হাসিনাকে “মা” ও বঙ্গবন্ধুকে “আব্বা” বলে ডাকতে দ্বিধা করতেন না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রাজনৈতিক অবস্থান বদলেছে, যা এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে পথ বদল
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় নুর হাকিম সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে থাকেন। পরে দলের ভেতর থেকেই একদল নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলে, সেই সুযোগে তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন।
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা সবার জানা।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারালে নুর হাকিমও গা ঢাকা দেন। এরপর তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নৌকার প্রতীক সরিয়ে ফেলা হয়। ধীরে ধীরে দেখা যায়, তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছেন।
তার অবস্থান বদলের চূড়ান্ত প্রমাণ মেলে গণভবনের এক ইফতার পার্টিতে, যেখানে তাকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা যায়।
নেতাকর্মীদের ক্ষোভ, জনগণের বিস্ময়
তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, “যিনি এতদিন বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করেছেন, তিনি কীভাবে বিএনপির ছায়ায় আশ্রয় নিলেন?” সাধারণ জনগণও বিস্মিত—নুর হাকিম কি আদৌ আদর্শিক রাজনীতিবিদ, নাকি কেবল ক্ষমতার সুবিধাভোগী?
সুবিধাবাদী রাজনীতি ও বিতর্কিত অতীত
নুর হাকিমের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি বিএনপি নেতাদের পুলিশ হয়রানি থেকে রক্ষা করার তদবির করতেন এবং এর বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নিতেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে মিরপুর এলাকায় নারী কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
তিনি নিজেকে সাংবাদিক ও প্রকাশক হিসেবে পরিচয় দিলেও, তার পরিচালিত দৈনিক পত্রিকার প্রকৃত প্রচারসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি কেবল তার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার একটি মাধ্যম।
নতুন দলের ঘোষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সম্প্রতি তিনি “দেশ জনতা পার্টি” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি তার জন্য একটি “ব্যাকআপ প্ল্যান”। কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, এটি আওয়ামী লীগে ফেরার কৌশল, নাকি বিএনপির ছায়ায় থাকার নতুন উপায়?
এদিকে, রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর তিনি ফেসবুকে সেটি পোস্ট করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি তার নতুন কোনো রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ।
নুর হাকিমের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন—নুর হাকিমের আয়ের উৎস কী? তিনি কি ব্যবসা করেন? কীভাবে তার বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্ভব? পাজারো গাড়িতে চলাফেরা করা একজন সাংবাদিক কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন?
তারা দাবি করছেন, তার নির্বাচনী হলফনামা, রাজনৈতিক দলের অর্থায়ন ও অন্যান্য সম্পদের উৎস তদন্ত করা হোক।
জনগণের প্রশ্ন: রাজনীতিবিদ নাকি সুবিধাভোগী?
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জনগণের মনে একটাই প্রশ্ন—নুর হাকিম কি সত্যিই একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদ, নাকি কেবল ক্ষমতার সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী? সময়ই বলে দেবে তার নতুন রাজনৈতিক অবস্থান কতদিন টিকে থাকে।