রাজু আহমেদ
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ৬নং ওয়ার্ডের বিতর্কিত কাউন্সিলর হাজী রজ্জব হোসেনের গাড়ীর চাপায় একটি শিশুর মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিনই দেড় লাখ টাকায় রফাদফা শেষ করে বলে এলাকায় খোভের সৃষ্টি হয়। রুপনগর থানায় মামলা হলেও এজাহারে উল্লেখ নেই হাজী রজ্জব হোসেন, গাড়ীর নাম্বার বা চালকের নাম।
জানাগেছে গত ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে রূপনগর থানার আরামবাগ আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর রোডে কাউন্সিলর হাজী রজ্জব হোসেনের বিলাসবহুল বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার দুই দিন পর ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত গাড়ী ও এক ব্যক্তিকে আসামি করে ডিএমপির রূপনগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী নিহতের বাবা আহম্মদ আলী। মামলা টি তদন্ত করছেন এসআই কামরুল।
এ ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার দিন দুপুরে হাজী রজ্জব হোসেন তার ব্যক্তিগত গাড়িতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গেটের সামনে শিশুটি গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মাথার মগজ বেরিয়ে আসে। এ সময় চালক মাসুদ গাড়িতেই ছিল; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ থানা হেফাজতে না নিয়ে প্রাইভেটকারসহ চালককে ছেড়ে দেয়।
সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপনগর থানা থেকে হাজী রজ্জব হোসেনের বাসা কয়েকশ গজ দূরে। সেদিন ঘটনার পর পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হাজী রজ্জবের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে ঘটনার সত্যতা পায়; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ থানা হেফাজতে না নিয়ে হাজী রজ্জব সহ প্রাইভেটকারসহ চালককে ছেড়ে দেয়। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-২১৪৮৫৭।
এদিকে হাজী রজ্জব হোসেন চালক মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
নিহত শিশু আয়েশার বাবা আহম্মদ আলী বলেন, ঘটনার সময় আমি মেয়ের একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। সে খেলা করছিলো চোখের সামনেই মেয়েটি মারা গেল। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো মামলা বা অভিযোগ করিনি। নেতার (হাজী রজ্জব) কাছে সব দায়িত্ব দিছি তিনি দেড় লাখ টাকা দিয়ে বলেছে কোর্টে গিয়ে মামলা তুলে নিতে।
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী (নাম না প্রকাশের শর্তে) জানান, এর মধ্যে ঘটনাটি পুরো এলাকার মানুষ জেনেছে। হাজী রজ্জব ও তার ড্রাইভার মাসুদকে সবাই চিনে। এক্সিডেন্টের সময় এরা দুজন গাড়িতে ছিল। মামলায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ প্রকৃত আসামিকে আড়াল করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ঘটনার বিষয়ে জানতে রুপনগর থানায় এ প্রতিবেদক উপস্থিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রূপনগর থানার এসআই কামরুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মারা গেছে মীমাংসা হয়ে গেছে। মামলার কপি চাইলে তিনি বলেন, মামলার কপি দিয়ে কি করবেন, ঘটনা মিমাংসা হয়ে গেছে, তারা কোর্টে গিয়ে আপোষনামা দিবে। নিউজ লিখে কি করবেন। যা হওয়ার হয়ে গেছে। গরিব মানুষ বেশি খুচাখুচি করলে (বাদী)র সমস্যা হবে। রজ্জব সাহেবের কোনো দোষ নেই। মামলা হয়েছে কার নামে জানতে এসআই চাইলে এসআই বলেন, ওটা জেনে কি হবে নিহতের বাবা তো মামলা প্রত্যার করে নিবে। আপনি বাদীর সাথে কথা বলেন। পরে অনেক অনুরোধের পর মামলার একটি কপি দেন এসআই কামরুল।
তাতে দেখাযায় মামলার কপিতে বাদীর নাম ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও গাড়ীর নাম্বার ও চালকের নাম অজ্ঞাত রয়েছে।
অজ্ঞাত মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, তরিগরি করে মামলাটি করা হয় তখন কারো সন্ধান পাইনি কিন্তু যখন আমরা সন্ধান পেয়েছি তখন বাদী মামলাটি আপোষ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, থানার কয়েকশো গজ দুরে রজ্জবের বাসা। শতশত মানুষের আনাগোনা ও ১৯ তারিখ প্রকাশ্যেই ঘটনা আর মামলা হলো ২১ তারিখে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেও রূপনগর থানার এসআই কামরুল গাড়ীর নাম্বার, চালক বা গাড়ী মালিকের নাম বের করতে পারেনি। এতেই ধারণা করেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী রজ্জব হোসেন এলাকায় কতটা ক্ষমতাসীন।
এবিষয়ে জানতে হাজী রজ্জব হোসেনের মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে প্রতিবেদক, ফোনের ওপাশ থেকে রিসিভ হলেও মাইকের বিকট শব্দ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।