বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে একাংশের সভাপতি মরহুম সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর শোক সভা স্বরণে ডা. জাহিদ হোসেন বক্তব্যে বলেন, ওয়ান ইলেভেন ও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা সরকারকে ঘিরে ধরেছে আপনাদের এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি:
বাংলাদেশ একাত্তর:অনলাইন নিউজ;
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ওয়ান ইলেভেনের সুবিধাভোগীদের চতুর্দিকে বসিয়েছেন। শেখ হাসিনার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন। সেজন্যই আজকে এই অবস্থা। সরকারের বয়স এখন ২ মাস হয়ে যাচ্ছে। এখনও কি আপনাদের ঘুম ভাঙেনি।
তিনি বলেন, চতুর্দিকে ওয়ান ইলেভেন এবং স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ঘিরে ধরেছে। এদের থেকে বের হয়ে না আসলে ওরা আপনাদেরও গিলে খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ব্যাপারে সজাগ না হলে এবং প্রতিহত করা না গেলে ফের দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। কাজেই দয়া করে ঘুম থেকে উঠুন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, ছাত্র-জনতা আপনাদের পাশে আছে। আপনারা দয়া করে সচেতন হোন।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে একাংশের সভাপতি মরহুম সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএফইউজে (একাংশ) ও ডিইউজে (একাংশ) আয়োজিত শোকসভায় রাজনৈতিক ও সাংবাদিক নেতারা অংশ নেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে ডা. জাহিদ আরো বলেন, অনেক মানুষের রক্তের উপর পা রেখে আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ক্ষমতায় বসেছেন। কোনো অবস্থাতেই নিজেদের অসীম ভাববেন না। সবার সীমাবদ্ধতা আছে। বিগত ১৬ বছর ধরে যারা মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরেছে, সে মামলাগুলো এখনও কেন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না? এসব মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কেন তাদেরকে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হবে? আপনারা এখন অনেকেই দায়িত্ব নেওয়ার পর সুর পাল্টে কথা বলছেন। আইনকানুনের কথা বলছেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রে সর্বত্র অনৈক্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য দরকার। জাতীয় পর্যায়ে ঐক্য দরকার। কী কারণে অনৈক্য হয়, সেটিও খুঁজে বের করে প্রতিকার করতে হবে।
রুহুল আমিন গাজীকে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাকে হারিয়ে একটি শূন্যতা অনুভব করছি। তার মত এমন সৎ সাহসী নেতৃত্ব বিরল। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের পেশাবিরোধী সব কালাকানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। এজন্য তাকে ১৮ মাস কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তার পরিবারকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুধু এটিই নয়, তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। একটি দিনের জন্যও তিনি বিরতি দেননি। তিনি বলেন, বর্তমান মুক্ত বাংলাদেশে মাহমুদুর রহমান জেলে কেন? তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। না হলে আমরা আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, রুহুল আমীন গাজীকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা যেতে পারে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম তার সম্পর্কে জানতে পারবে। তার মত আপসহীন লড়াকু নেতৃত্বের ইতিহাস ধরে রাখতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজীর সিনা যত বড় ছিল, কলিজা ছিল তার চেয়ে অনেক বড়। তিনি আন্দোলন সংগ্রামে একজন সাহসী নেতা ছিলেন। যেকোনো কর্মসূচিতে তাকে ডাকলেই চলে আসতেন। রুটি-রুজির আন্দোলনে তার সমকক্ষ কোনো নেতা ছিল বলে আমার জানা নেই। কর্ম, সাহস ও ডেডিকেশন দিয়েই নেতা হয়েছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন আমাদের বটগাছ। তার শূন্যতা পূরণ করতে পারবো কিনা জানি না।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলমের সঞ্চালনায় নাগরিক শোক সভায় আরো বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, দ্য ডেইলি নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও সরদার ফরিদ আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কবি রফিক মোহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম দিদার, খন্দকার আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ ফেডালের সাংবাদিক ইউনিয়নের একেএম মহসীন, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, সাপ্তাহিক তদন্ত চিত্র পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পদ, মোঃ জিয়াউর রহমান, শাহজাহান সাজু প্রমুখ।