(কামরুল ইসলাম)
বাংলাদেশ একাত্তর.কম/সোমবার;
দোষ না করেও দোষী কিংবা অন্যের দোষে দোষী। বিষয়টি এভিয়েশন সেক্টরে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের কাস্টমস্ নীতিমালার ভিন্নতার কারনেও এয়ারলাইন্সগুলো সংবাদ শিরোনাম হয়ে যাচ্ছে।
প্রায়ই আমরা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের নাম উল্লেখ করে ছোট বড় শিরোনামের নেগেটিভ সংবাদ, যা এয়ারলাইন্সকে বিব্রত করছে। স্বর্ণ উদ্ধার সংক্রান্ত নানা প্রকারের শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু যাত্রী স্বর্ণ বহন করে থাকে, যা দেশের কাস্টমস নীতিমালার পরিপন্থি। কিংবা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে মাদক বহন করছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। যাতে করে এয়ারলাইন্সগুলোর ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এয়ারলাইন্স সম্পর্কে জনগন ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে। এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ফলে কেউ কেউ হয়তো এয়ারলাইন্সকে দোষারোপ করতে পারে। বাস্তবে কি এয়ারলাইন্স দোষী বা দায়ী?
প্রতিটি এয়ারলাইন্স-ই, যাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রচার করে থাকে কেবিন ব্যাগেজ কিংবা লাগেজে কি কি বহন করতে পারবেন কিংবা কি কি বহন করতে পারবেন না। তার উপর ভিত্তি করে বিমান বন্দরের সিকিউরিটি স্ক্যানিং এর মাধ্যমে অবৈধ কোনো জিনিসের উপস্থিতি পেলে তা জব্ধ করে দেয়। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যায়, কোনো মূল্যবান জিনিস যেমন- স্বর্ণ কিংবা স্বর্ণের তৈরী অলংকার, মোবাইল, অথবা আগ্নেয়াস্র যদি যাত্রীদের কাছে থাকে তবে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট ফরম আছে যেখানে উল্লেখ করতে হবে, ওজন ও মূল্য সহ মূল্যবান দ্রব্যের বর্ণনা থাকতে হবে। নতুবা সব অনুল্লেখ্য দ্রবাদি অবৈধ হয়ে যাবে।
এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কখনই সিকিউরিটি চেক এর সাথে জড়িত না। বিমানবন্দরের বিভিন্ন সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট, রেগুলেটরি অথরিটি কিংবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সকল ধরনের চেকগুলো করে থাকে। অথচ পর্যাপ্ত সিকিউরিটি চেকের পরও যাত্রীদের কাছে অবৈধ জিনিস পাওয়া গেলে এয়ারলাইন্স এর ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে সরাসরি এয়ারলাইন্সকে দোষী সাব্যস্ত করে থাকে।
করোনা মহামারির সময়েও দেখা যায় কোনো যাত্রী কোভিড টেস্টে পজিটিভ হলে তা এয়ারলাইন্সকে দোষারোপ করেছে বিভিন্ন বিমানবন্দর। অনেক সময় এয়ারলাইন্সকে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা থেকেও বিরত রাখা হয়েছে, জরিমানা করা হয়েছে অথচ এয়ারলাইন্স শুধু যাত্রীদের হেলথ ডিক্লারেশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে বোর্ডিং পাশ ইস্যূ করে থাকে। ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ থাকলে এয়ারলাইন্স এর ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান সংস্থাগুলো।
২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপনে এক ব্যক্তি ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন। শুল্ক ছাড়া রৌপ্য আনতে পারবেন ২০০ গ্রাম পর্যন্ত। আর শুল্ক প্রদান সাপেক্ষে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য আনতে পারবেন। যার জন্য প্রতি ১১.৬৬ গ্রাম স্বর্ণে তিন হাজার টাকা ও একই পরিমাণ রৌপ্যে ১১.৬৬ গ্রামে ছয় টাকা করে কর দিতে হবে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আকাশপথ, জলপথ বা স্থলপথে আগত একজন অসুস্থ, পঙ্গু অথবা বৃদ্ধ যাত্রীর ব্যবহার্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও হুইল চেয়ার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতীত খালাস করতে পারবেন। তবে সব যাত্রীকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তফলিস-১ বর্ণিত ফরম পূরণ করে ব্যাগেজ ঘোষণা দিতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাগেজ আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের বর্ণনা ও ব্যবহার সম্পর্কে লিখে ঘোষণা দিতে হবে।
বিনা শুল্কে আমদানি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে দুটি মোবাইল বা সেলুলার ফোনসেট। ক্যাসেট প্লেয়ার/টু-ইন ওয়ান, ডিস্কম্যান/ওয়াকম্যান (অডিও), বহনযোগ্য অডিও সিডি প্লেয়ার, একটি ইউপিএসসহ ডেস্কটপ/ল্যাপটপ কম্পিউটার, কম্পিউটার স্ক্যানার, কম্পিউটার প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরা বা ডিজিটাল ক্যামেরা, সাধারণ/পুশবাটন/কর্ডলেস টেলিফোনসেট, সাধারণ বা ইলেকট্রিক ওভেন বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন, বার্নারসহ রাইস কুকার, প্রেসার কুকার ও গ্যাস ওয়েন, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, জুসার ও কফিমেকার, সাধারণ ও বৈদ্যুতিক টাইপরাইটার, বৈদ্যুতিক ও ম্যানুয়াল গৃহস্থালি সেলাই মেশিন, টেবিল, প্যাডেস্টাল ফ্যান ও গৃহস্থালি সিলিং ফ্যান।
এছাড়া বিনা শুল্কে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য স্পোর্টস সরঞ্জাম, ২০০ শলাকার এক কার্টন সিগারেট, ২১ ইঞ্চি পর্যন্ত প্লাজমা, এলসিডি, টিএফটি ও এলইডি টিভি এবং ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত সিআরটি সাদা-কালো ও রঙিন টেলিভিশন, ভিসিআর ও ভিসিপি, সাধারণ সিপি ও দুটি স্পিকারসহ কম্পোন্যান্ট, চার স্পিকারসহ কম্পোন্যান্ট এবং ১৯ ইঞ্চি এলসিডি কম্পিউটার মনিটর আনতে পারবেন।
করযোগ্য পণ্যগুলোর তালিকায় রয়েছে—প্লাজমা, এলসিডি, টিএফটি ও এলইডি,হোম থিয়েটার, রেফ্রিজারেটর, ডিপ ফ্রিজ, এয়ারকুলার ও এয়ারকন্ডিশনার।
ডিস অ্যান্টেনা, এইডি ক্যাম, ডিভি ক্যাম, বিইটিএস ক্যাম ও প্রফেশনাল কাজে ব্যবহূত হয় এ রকম ক্যামেরা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আনা এয়ারগান ও এয়ার রাইফেল, ঝাড়বাতি, কার্পেট ১৫ বর্গমিটার পর্যন্ত ও ডিশ ওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন ও ক্লথ ড্রাইয়ারের জন্য কর দিতে হবে।
বৈধ আর অবৈধ পণ্যের পার্থক্যই হচ্ছে সৎ আর অসততার মধ্যে যেমন পার্থক্য। সংবাদ মাধ্যমে অনেক সময় ব্যতিক্রমও দেখা যায়, অবৈধ পন্য বহনে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার কিছু কর্মীর কদাচিৎ জড়িত থাকার খবরও পাওয়া যায়, যা দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। ব্যক্তির দোষ বা অন্যায় কোনো প্রতিষ্ঠান বহন করতে পারে না।
সোস্যাল মিডিয়ার যুগে যে কোনো নেগেটিভ সংবাদ বিদ্যুৎ বেগে ধাবিত হয়। নেগেটিভ সংবাদ পরিবেশনের পূর্বে সংবাদ মাধ্যম গুলোর সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে প্রচার করলে এয়ারলাইন্সগুলো কিংবা বিভিন্ন সংস্থা বাণিজ্যিকভাবে কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ফলে জাতীয় বিমান সংস্থাসহ দেশীয় সকল বেসরকারী বিমানসংস্থা কিংবা বিদেশী এয়ারলাইন্স বা বিমানবন্দরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা সোস্যাল মিডিয়ার সংবাদকে খবরের সোর্স কিংবা উৎস হিসাবে ধরলেই সঠিক তথ্যের খোঁজ নেওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে সংবাদ পরিবেশনে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কম থাকে।
অযাচিতভাবে দেশীয় কোনো এয়ারলাইন্সের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংস্থাটি। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের এভিয়েশন, জিডিপি’র অংশীদারিত্ব কমে যাবে, চাকুরীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে দেশের শিক্ষিত জনগন। ফলে দেশের এভিয়েশন মার্কেট শেয়ার চলে যাবে বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে।
লেখক: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।