নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী সরকার পতনে ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হোটেলকর্মী মো. সাগর (২৪)। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতে পরিবারের আয়ের একমাত্র সম্বল রিকশা বিক্রি করে দেন রিকশা চালক বাবা আলতাফ হোসেন।
রিকশা বিক্রির টাকা এবং অন্যদের সহায়তায় চিকিৎসা শেষে এখন নিজের বাড়িতে সাগর। তবে বাবার আয়ের শেষ সম্বল রিকশাটি বিক্রি করে এখন অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। উর্ধগতির মূল্যের বাজারে সংসারের খরচ ও ছেলের ওষুধ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আলতাফ হোসেনের। ধারদেনা ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সাগরের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের গাবুয়া গ্রামে। সাগর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অভাব অনটনে পড়ে সংসারের প্রয়োজনে অল্প বয়সে সামান্য বেতনে চাকরি নেন ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে। তাঁর সামান্য আয় এবং বাবার রিকশার চাকা ঘোরানো পরিশ্রমের টাকায় চলত ছোট ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ-সহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে সাগরের পরিবারের।
গত বুধবার সাগরের বাড়িতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা দেখতে পান সাগরের বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন এখনো শুকায়নি। তাঁর বাঁ হাত অবশ হয়ে গেছে। সেই হাত দিয়ে কিছুই করতে পারেন না সাগর। চোখেও ভালো দেখতে পান না। আর কারও সাহায্য ছাড়া চলতে–ফিরতেও কষ্ট তাঁর। উন্নত চিকিৎসা পেলে সে হয়তো আবারও কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন। এমনটাই প্রত্যাশা তাঁর মা–বাবা ও স্বজন প্রতিবেশীদের।
আহত সাগর ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট সকালে ঢাকার মিরপুরের সিঙ্গাপুর আবাসিক হোটেলের সামনের সড়কে নাশতা করার জন্য বের হন সাগর। পথে তিনটি গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত তাজা লাশ পড়ে থাকতে দেখে তিনি ছাত্র–জনতার মিছিলে যান। একপর্যায়ে তিনি মিছিলের অগ্রভাগে চলে যান। মিছিলটি মিরপুর-২ থানার সামনে এলে থানার ওপাশ থেকে গুলি ছুড়লে দুটি গুলি এসে লাগে সাগরের বুকের বাঁ পাশে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আন্দোলনরত ছাত্র–জনতা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় আলোক হাসপাতালে ভর্তি করেন। আওয়ামী সরকার পতন করে ছাত্রজনতার আন্দোলনে জয়ী হয়ে সরকারের উপদেষ্টার দায়ীত্বে বসেন ছাত্র সমন্বয়ক দু’জন, কিন্ত চিকিৎসার অভাবে সাগরের জীবন অনিশ্চিত অন্ধকারে সেই খবর এখন পর্যন্ত কেউই নেয়নি।